শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪












আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব।

দিন ৪: ছিতকুল- রিকাঙ পিও - কল্পা 

দুদিনের জিরান ছেড়ে আবার আমরা পথে, কিন্নর দেশের শেষ স্টেশন কল্পা। চলার পথ ফিরবে সেই রকছম সাংলা পেরিয়ে কার্চম অবধি, তারপর বসপা কে ছেড়ে আমরা আবার ফিরে যাবো শতদ্রুর তীরে, পাহাড় বেয়ে উঠে যাবো রিকাঙ পিও, তারপর আরো ওপরে কল্পা। সকালের আলো ঝলমলে পাহাড়-ঝর্ণা পেরিয়ে পিও পৌঁছলাম তখন সূর্য মধ্যগগনে। কিন্নরের সদর শহর পিও, তার মিষ্টি নামের মতোই, পাহাড়ের গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ভারী সুন্দর, ভারী মিষ্টি। সামনের আকাশছোঁয়া পাহাড়ের রূপ দেখতে দেখতে দুপুরের খাওয়া আর প্রয়োজনীয় রসদের কেনাকাটি হল ভালোই। তারপর কল্পা।

কল্পা শহরের আরো ওপরে হিমাচলী সরকারের হোটেল কিন্নর কৈলাশ। পাহাড়ের ধাপে ধাপে আপেল বাগানের গা ঘেঁষে কটেজ গুলো ছবির মতো ফুটে আছে। এই গ্যালারি থেকে নাকি ভাগ্যে থাকলে সকালের আলোয় দেখা মেলে কিন্নর কৈলাশ শৃঙ্গ-শ্রেণীর, এখন মধ্যদিনের ঝলসানো ঔজ্জ্বল্যে যিনি আড়ালে। হোটেল ভারী সুন্দর, হোটেল কর্মী দের আতিথেয়তা আরো সুন্দর, আর সবচেয়ে সুন্দর স্নান সেরে ভিজে চুল এলিয়ে দিয়ে দুপুরের রোদে পিঠ পেতে পাহাড়ি হাওয়া আর আধপাকা আপেলের গন্ধ নেবার আমেজ। এবারে আমাদের থাকা মোটে একদিনের, কিন্তু কল্পা আর্জি জানিয়ে রাখলো আবার আসার, অনেকদিনের জন্যে।

বিকেলে দেখতে বেরোনো রোঘী গ্রাম, সুইসাইড পয়েন্ট, আর চিনে নেয়া কল্পার অন্দর। সবুজে সবুজ কল্পার পাহাড় মোড় ঘুরতেই মেটে-রং, পাথুরে। অতলান্ত খাদের বুকে ঝুলে থাকা সুইসাইড পয়েন্ট এর পাথরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালেই দিব্বি টের পাওয়া যায় বেঁচে থাকতে কত ভালোবাসি। সেই কাঁপন নিয়েই এলাম  রোঘী গ্রামে। ছোট্ট গ্রাম-- আপেল বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তা; পায়ে পায়ে হেঁটে দেখে নেয়া যায় সমবায় অফিস, পোস্ট অফিস, গ্রামের মন্দিরের চুড়ো, আর আলাপ জমিয়ে নেয়া যায় স্কুল-ফেরত একদল ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে। তাদের দেখাদেখি পথের ধুলো থেকে কুড়িয়ে মুখে দেয়া টুসটুসে পাকা এপ্রিকট, মিষ্টি রসে জারিয়ে ওঠে কল্পার বিকেল। এখানে বাঙালী পর্যটকের কদর ভারী, এপ্রিকট কুড়ুনি মেয়েটি দেখেই চিনে নেয় আমাদের কলকাতার দল বলে। পাহাড়ে আগেও দেখেছি এমনটা, বাঙালী বলে বেশ একটু গর্ব ই হয়েছে সব সময়। 

ফিরে আবার চিন্নি গ্রাম, যার ই অধুনা নাম কল্পা। পাশাপাশি মন্দির আর মনাস্ট্রি, জোড়া দুই আঙ্গনে অমলিন হাসি আর খেলায়  উচ্ছল একদল মেয়ে। তাদের সঙ্গে আলাপ, খেলায় যখন বেশ মেতে, তখন ই হঠাৎ খেয়াল পড়লো এদের বাসস্থান: পাশের অনাথ-আশ্রম টি। অনেক পেয়েও আরো না পাওয়ার দুঃখে দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী করে তোলা আমাদের জীবন কে মুহূর্তে ব্যঙ্গ করে গেল এদের এই বিকেলের বন্ধু-সাহচর্য টুকু পেয়েই অনাবিল আনন্দে ভাস্বর মুখগুলো। ভারী পরিপূর্ণ একটা বিকেলের শেষে অস্ত গেলো কল্পার উজ্জ্বল সূর্য। 

কল্পা কে সেদিন চিনলাম তার মনের উষ্ণতায়, তবু ঘুমোতে যাবার সময় ছিলই বুক-দুরুদুরু : পরের দিন যদি দেখা না পাই কিন্নর কৈলাশের? আমি বার পাঁচেক দার্জিলিং গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি মোটে একবার, তাই দুষ্প্রাপ্য দর্শন না পাবার ভয়টাই বেশি ছিল। 

পরদিন অ্যালার্ম এর ও আগে ঘুম ভেঙে গেছে, বাইরে তখন চরাচর ব্যেপে মেঘ, আলোর ফুলকি ফোটেনি তখনো। আনমনে আবার ঘুমিয়ে পড়বো  কিনা ভাবছি, তখন ই হঠাৎ একফালি আলো এসে পড়লো আকাশের একটি প্রান্তে, মেঘের বুক চিরে জেগে উঠলো পাথর-বরফে মেশানো একটি অবয়ব। পাঁশুটে ভোর তখনো চারপাশে, শিশিরের শীত তখনো ঘাস ছুঁয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার খালি পা, তখনো জেগে ওঠেনি পাহাড়। শুধু এক সবজেটে পাহাড়ি thrush আমার সামনের আপেলগাছটায় এসে বসলো, ছোট ছোট তীক্ষ্ণ শীষে সুর ছড়িয়ে দিতে লাগলো পাহাড় উপত্যকার বুক ভাসিয়ে ঠিক যেন অবন ঠাকুরের গল্পের সেই কুঁকড়ো র মত-- আর এক এক পরতে একটু একটু করে সরে যেতে লাগল মেঘের আস্তর, আকাশের বিশাল ক্যানভাসে একটু একটু করে জেগে উঠতে লাগল দিগন্ত জোড়া কিন্নর কৈলাশের শ্রেণী। সহযাত্রীদের ডেকে দেখাতে গেলাম, তারা একবার দেখেই তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে; ক্যামেরায় চোখ রাখতে গেলাম, মেঘ-কুয়াশার বেরং পেরিয়ে ছবিতে ধরা দিলো না এই জাগরণ-- এ দৈব মুহূর্ত যেন আমার, শুধু আমার জন্যে ফুটে উঠলো বিশ্বলোক জুড়ে। কি এক অহৈতুকী কৃপায় এক লহমায় পুণ্য হয়ে উঠল আমার অস্তিত্ব। আমার দুদিনের পথ চলা হঠাৎ ই সময়ের সীমা ছাড়িয়ে উপচে গেল, লুপ্ত করে দিল স্বপ্ন আর বাস্তবের তীর। আর কূলপ্লাবী হৃদয় নিয়ে ভারী অযোগ্য ভারী নগণ্য  আমি, আমার ছোট জগৎ ছোট স্বপ্ন ছোট সংসার নিয়ে ছোটত্বের সাধনায় ভুলে থাকা আমি, শুধু তাকিয়ে রইলাম এ  বিশাল, বিপুল বিশ্বরূপের পানে। 

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৩

আমাদের দশ দিনের স্পিতি সফরে ছিতকুল ছিল দুদিনের বিরাম। ইচ্ছে ছিল দুচোখ ভরে রেখে দেবার, মনের তন্ত্রীতে বেঁধে নেওয়ার ভারত-তিব্বত সীমানার শেষ গ্রামটি কে। চিনলাম  ছিতকুলকে, কিন্তু অপ্রত্যাশিতের পথ ধরে। আজকের স্পিতি-যাপনে ফিরে দেখি সেই অন্য স্বাদের, অন্যরকম  ছিতকুল।

দিন ৩: ছিতকুল 

স্নিগ্ধ শীতল অফিসে বসে আছো তুমি, মুঠোফোন ছাড়া তোমার এক মুহূর্ত কাটে না। জানলার বাইরে আকাশে রঙের পর রং জমে ওঠে, ধুয়ে যায়, তুমি ফিরেও চাও না। তুমি এস ছিতকুলে, শিখে নাও বেঁচে থাকা কাকে বলে, জেনে নাও নিজেকে। অন্তর্জাল কই, তোমার মুঠোফোন কথা বলার যোগাযোগ টুকুও দেবে না তোমায়; উষ্ণ জলের আকুতি তোমার থামিয়ে দিয়ে মাঝ-স্নানে দপ করে নিভে যাবে আলো -- আর শহুরে বিলাসিতায় চিরাভ্যস্ত তুমি যখন এইসব "অসুবিধায়" বিপন্ন হয়ে উঠবে, তখন ই তোমার সব অভিযোগ ঘুচিয়ে জানলার ফ্রেমে ভাস্বর হয়ে উঠবে হিমালয়। তোমার স্পিতি-যাত্রার প্রথম পাঠশালা ছিতকুল, তোমার পথের প্রথম তিলক ছিতকুল। 

কি করবে তাহলে তুমি ছিটকুলে? সকালে উঠে হয়তো ভাবছো মেঘলা দিন, কিন্তু তাই বলে পর্দা টেনে দিয়ো না যেন। হঠাৎ কোন ফাঁকে হয়তো চরাচরব্যাপী পাহাড় রাঙিয়ে উঠবে সূর্য, ওপাড়ের মানুষের-স্পর্শ-না-পাওয়া পাহাড়ের নিবিড় দেওদার-পাইনের বন ঝলমল করে উঠবে, দূরে বসপার তীর ধরে এঁকেবেঁকে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া ধুলোপথ বেয়ে পেরিয়ে যাবে কোনো আর্মি-ট্রাক, তার চলার ধূলোটুকু মিলিয়ে যেতে না যেতে আবার সেই নিঝঝুম ঝিঁ-ঝিঁ ডাক, আবার সেই অবিরাম ঝর্ণার কুলকুল, আবার সেই খাদের গভীরে বয়ে চলা বসপার মন্দ্রিত ধ্বনি। পায়ে পায়ে নেমে এস বসপার পাড়ে, মন ভরে নাও বসপার মাতোয়ারা উল্লাসে, তার গা বেয়ে উঠে যাওয়া পাইনের বনের বুক চিরে বয়ে যাওয়া হাওয়ার ব্যাকুল নিঃশ্বাসে। ভেজা শীত নিয়ে সেই হাওয়া তোমারো মুখে, চুলে চুপিচুপি আল্পনা এঁকে দিক। চুপ করে বসে থেকো তুমি, কবেই বা এমন বসেছো চুপ করে? কখন যেন তোমার মনের ভেতরের কোলাহল ও শান্ত হয়ে যাবে, কখন যেন এক সুরে তোমার মনও বেজে উঠবে। কেমন এক নিবিড় অচ্ছেদ্যতায় তুমি জড়িয়ে যাবে এই নিতান্ত একলা, নিতান্ত অমিশুক ছিতকুল এর সঙ্গে।

অমিশুক বৈকি ছিতকুল। রাতে পৌঁছেই তো তুমি শুনতে পেয়েছো ঢোল আর কাঁসরের আওয়াজ। সকালে চা দিতে এসে অক্ষয় ভাইয়া তো বলেও গেছে যে ছিতকুল এর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর স্বামী সাংলার কামরু ফোর্টের মন্দির থেকে পত্নী-সমাগমে এসেছেন, তাই গ্রাম এ ভারী ধূম এই চারদিন। সেই মেলায় কিন্তু তোমার নিমন্ত্রণ নেই, তুমি যে বহিরাগত। মন্দির চত্বরে ফুলের মতো নতুন জামা পরা শিশুর মেলায় তোমার প্রশ্নের জবাব পাবে না তুমি, তুমি যে বহিরাগত। সকালে হোটেলের বারান্দা থেকে দেবতাদের ডুলি নিয়ে শোভাযাত্রা দেখে থমকে যাবে তুমি, কিন্তু প্রাণপণে বাঁধন ছিঁড়তে চাওয়া সাদা ছাগলটাকে যখন হোটেলের ঠিক পিছনে গ্রামসীমা-নির্দেশক পাথরে নিয়ে এসে তামার থালায় ধূপের আবিষ্ট গন্ধে ওরা বুঁদ করে দেবে, তোমাকে তখন চলে যেতে হবে অন্দরে, তুমি যে বহিরাগত। তোমার ঠাঁই হেথা নয়, অন্য কোথা , অন্য কোনোখানে।
তুমি অভিমান করবে, আর সব হিমাচলী গ্রামের স্বাভাবিক উষ্ণতা না পেয়ে তোমার বুঝি দুঃখ ও হবে। কিন্তু তার ও পরে, যখন গ্রামপথের কাদা পেরিয়ে তুমি হোটেলে ফিরবে, প্রবল শীতের মধ্যে লেপের ওম নিতে নিতে যখন বুঝতে পারবে প্রতিটি বাড়ির মাথায় স্তূপ করে রাখা কাঠকুটোর মানে, যখন বাঙালী হোটেলের হাওড়ার ছেলেটি তোমায় শোনাবে গত এপ্রিলে ভাল্লুক আর স্নো-লেপার্ড দেখার রোমহর্ষক গল্প, তখন একটু একটু করে তুমি বুঝতে পারবে ছিতকুল এর অভিমান। যে দেশ এর রক্ষার জন্যে সৈন্য পাহারায় সারা বছর জেগে থাকে ছিতকুল, কিই বা দিয়েছে সেই দেশ তাকে। তাই কিছু উদগ্রীব পর্যটকের বেমানান কৌতূহলে সে যদি পসরা না ই সাজায় তার নিজস্ব সংস্কৃতির, নিজের দেবতার, তাকে কি সত্যি ই দোষ দেওয়া যায়? তাই শখের পর্যটক তুমি, চলে যেও বসপার ধারে, ঘুরে এস সাংলার প্রধান বাজারে, ইন্দো-তিব্বতী সীমার সদাসতর্ক জওয়ানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এস, কিংবা বাতসেরি গ্রামের কাঠের মন্দির দেখে এস বরং। ছিতকুল হয়ে থাক দূর থেকে সুন্দর, কিন্তু দুর্ভেদ্য কুহেলিকার মতন দুর্জ্ঞএয়










স্পিতি-যাপন : পর্ব ২

আমাদের দশ দিনের স্পিতি-সফর যেন দশ রঙে ভাস্বর। এই বেরঙের দুনিয়ায় যাতে তারা হারিয়ে না যায়, তাই এই ধরে রাখতে চাওয়া আমার স্পিতি-যাপন। 


দিন ২- নারকান্দা-সাংলা-ছিতকুল 

স্পিতির পথে যতি নেই, ফেরা নেই, আছে শুধু সামনের দিকে চলা আর চলা।  এ যাত্রার নিয়ম ই তাই, ফিরে তাকানো যে বারণ এ পথে। নারকান্দা থেকে  আজ যাত্রা কিন্নর-দেশ। আমাদের সময় সীমিত, তাই সারাহান কে পাশ কাটিয়ে সোজা পৌঁছবো বসপার তীরে ভারতের শেষ গ্রাম ছিতকুল। ফেলে এলাম সদ্য ঘুম-ভাঙা নারকান্দা, পরে কোনোদিন হয়তো আবার আসবো, কথা দিয়ে। 
পথে রামপুর-বুশহর থেকে সঙ্গ নিলো শতদ্রু। গৈরিক, গম্ভীর, বর্ষাস্ফীত, সুনিশ্চিত পুরুষালি শতদ্রু। পঞ্চনদীর বিলিতি নামকরণে আমার সবচেয়ে আপত্তি এই নদ টিকে সাতলুজ নাম দেওয়ায়। এমন কুয়াশার ওম-জড়ানো পাহাড়, কালো পিচের নয়নাভিরাম রাস্তা, আধো-ঘুমে পাহাড়ি গন্ধমাখা জনপদ জখরি, জেওরি, সুনগর, আর বাঁকে বাঁকে দেবালয় পেরিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম  কখনো সাতলুজ হতে পারে?! 

টাপরি আমাদের পরিচয় করলো প্রথম পাহাড়ি স্বাদের সঙ্গে। পথের পাশের ছোট্ট কিন্তু ভারী ছিমছাম দোকানে হিমাচলী থালি। উত্তর-ভারতীয় গুরু-ভোজন নয়, সহজিয়া দাল-রাজমা-কড়ি-চাওল এর আত্মীয়তার সুর আপন করে নিল আমাদের সন্দিগ্ধ বাঙালি রসনা। হিমাচলী কড়ি আর কিন্নরী গানের যুগল আমাদের আরো একটু কাছে এনে দিলো পথের। এ পথ তো এমন ই, আগল ভাঙার, হৃদয় দেওয়ার উদযাপন। যত্নে বাঁধা সীমার থেকে বাইরে ধুলো-কাদার পৃথিবীতে এসে দাঁড়ানোর আহবান। 

জেওরি-চুলিঙ-ওয়াংটু-কার্চম -- একের পর এক বিভিন্ন মাপের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। খরস্রোত শতদ্রু আলোয় ভরিয়ে তুলছে পাহাড় কে। কার্চম এ শতদ্রু কে ছেড়ে ধরলাম বসপার পথ। নীল আকাশ, বর্ষার আবিল বসপা, আর হঠাৎ রুক্ষ হয়ে যাওয়া পাহাড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত খারাপ হতে থাকলো রাস্তা। কোথাও তীক্ষ্ন বাঁকের রুদ্ধশ্বাস, কোথাও পাহাড় ফাটিয়ে তৈরী রাস্তার ওপর ঝুলে থাকা  পাথরের  ছাদ, কোথাও বা হঠাৎ পথ করে নিয়েছে পাহাড়ের বুক চিরে বোবা টানেল। চড়াই-উতরাই বেয়ে, বসপাকে কখনো পাশে কখনো নিচে রেখে আমরা যখন সাংলায় পৌঁছলাম, আকাশে তখন মেঘের সাজ। 

কিন্নর বাঙালির প্রিয় গ্রীষ্ম-গন্তব্য, সাংলায় ঢুকতে না ঢুকতে চোখে পড়লো বাঙালি হোটেল। পাহাড়ের গা জুড়ে ছড়ানো শহর সাংলা, শহরের আকাশসীমায় দেখা যায় প্রাচীন কামরু ফোর্ট। হিমাচলী কাঠ-কুহনি গঠনকলার অনবদ্য ছাপ। দীর্ঘ সোপানপথে আলাপ হয়ে গেলো হিমাচলী জীবনের সঙ্গে, কিন্নরী আপেল আর এপ্রিকট বাগানের সঙ্গেও। জুলাই শেষের আপেলবন লাল-সবুজে মেশামেশি-- সবুজ, সোনালী, লাল আপেল অপেক্ষায় আছে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠার, আর তাদের জন্যে অপেক্ষায় আছে কাঠ-পাথরের বাড়িগুলোতে থাকা ভীষণ পরিশ্রমী কিছু মানুষ। কোথাও বানর বা অত্যুৎসাহী মানুষের নাগাল থেকে বাঁচাতে গাছগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে সাদা বা সবুজ জালে, কোথাও আলতো আড়ালে দোল খাচ্ছে সুবিখ্যাত কিন্নরী আপেল। 

সাংলা পেরোতেই নিচে বসপার তীর ঘেঁষে ছবির মতো সুন্দর বাতসেরি গ্রাম। কাল আসবো কথা দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম, কারণ ততক্ষনে আকাশ ঢেকে দিয়েছে বজ্রগম্ভীর মেঘ, আর ফোঁটায় ফোঁটায় এসে পড়েছে পাহাড়ি বৃষ্টি। আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি নির্জন পাইন-পাহাড়, পথের ওপর নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ ঝর্ণা, ছবির মতো সুন্দর রকছম গ্রাম এবং মূর্তিমান অসঙ্গতির মতো সীমান্ত-সীমার চেকপোস্ট। আর অবশেষে গাড়ি হঠাৎ থেমে গেল তেমন ই এক পথে এসে পড়া ঝোরার সামনেটিতে। কোথায় হোটেল? সামনে তো মরকত-সবুজ ঘাস আলো করে ফুটে আছে গোছায় গোছায় নাম না জানা ঘাসফুল, কুলকুল করে ঝাঁপিয়ে চলেছে সাদা ফেনায় ফেনিল ঝোরা, যেদিকে দুচোখ যায় আবছা মেঘের বর্ডার-দেওয়া পাহাড়, পাহাড়, আরো পাহাড়। সেই ছাইরঙা মেঘ, বাদামি-সবুজ পাহাড়, আর সবুজ ঘাসের গায়ে দিগন্তসীমায় আঁকা ছোট্ট একটি দোতলা বাড়ি -- আমাদের ছিতকুলের দুদিনের আশ্রয় Wanderers' Nest. গ্রামের সীমানায়, পাহাড়ের কোলে ছবির মতো হোটেল টি, একপাশে আদিগন্ত সবুজ চারণভূমি, অন্যদিকে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি আর মন্দির সমেত বিছিয়ে আছে ভারত-তিব্বত সীমানার শেষ গ্রাম ছিতকুল। 








স্পিতি-যাপন : পর্ব ১

স্পিতি থেকে ফিরে এসেছি এক সপ্তাহ হল। দশ দিনের যাত্রা শেষে এখন আবার ধোঁয়াশা-খিন্ন দিল্লি, ধূলি-মলিন সোনিপত। এই দৈনন্দিনতার রাজ্যে বুঝি ঠাঁই নেই সেই অলীক দশ-দিনের, সেই তীব্র স্বচ্ছ নীল-এর, সেই নানা-রঙের পাথরের ক্যানভাস এ অপরূপ সূর্যাস্তের, সেই অবিরল একাকিত্বের, অনাবিল দিবাস্বপ্নের। তাই স্মৃতির কুয়াশা ঢেকে ফেলার আগেই লিখে রাখি সেই দশ-দিনের গল্প। ধরা থাক কিছু মুহূর্ত, কিছু অনুভব, কিছু বা অলীক ভালোলাগা। আমার স্পিতি-যাপন।

দিন ১- দিল্লি-নারকান্দা 

বছর দুই হল ছোটবেলার হাওড়া স্টেশনের জায়গাটা নিয়েছে কাশ্মীরি গেট এর আই. এস. বি. টি. । হকারের হৈচৈ, ব্যাগ-কাঁধে দূরাগত দৃষ্টির যাত্রী, এক-হাত লালচুড়ির মুগ্ধনয়না নববধূ, চা-কফি-ইডলির ক্যান্টিন-- সব মিলিয়ে মন উড়ু-উড়ু একটা ব্যাপার। সেখান থেকে যাত্রা শুরু। হিমাচল পরিবহণের সুদৃশ্য হিমসুতা বাস-- ঘুম আসতে না আসতে টের পাই কখন চলার পথের ছন্দ বদলে গেছে; বাঁকে বাঁকে কখন আমরা পৌঁছে গেছি পাহাড়ে। রাতের অবয়ব ফুটে ওঠে পাহাড়ি গাছে, এলোমেলো ফুটে থাকা পাহাড়ি গঞ্জের আলোয়, পরওয়ানূ পেরোতে না পেরোতে আধো আলোয় ডানা মেলে পাহাড়ি ভোর।
গ্রীষ্মের সিমলা ঠিক যেন পাহাড়ে-সাম্রাজ্য-পাতা-দিল্লি কি চন্ডিগড়, তাই সিমলা নয়, আমরা থামবো নারকান্দায়। ভোরের নির্জন সিমলা থেকে শুধু নিলাম প্রথম পাহাড়ি গন্ধ, আর আমাদের আগামী দশদিনের বাহন সমেত সারথী দিলিপ জি কে। 
সিমলার কাছে হলেও নারকান্দা নির্জন ছিমছাম শহর। পাহাড়ের মাথায় হিমাচলী সরকারের হোটেল হাটু থেকে সাফসুতরো দিনে দেখা যায় ধৌলাধরের ঢেউ-এর পর ঢেউ। কিন্তু এই শেষ জুলাই এর বর্ষার নারকান্দা মানে মন-কেমন করা সবুজ, বুড়ো পাইনের আলতো দীর্ঘশ্বাস, মেঘ-কুয়াশার নরম জল রং। বর্ষার নারকান্দা মানে হঠাৎ চমকে দেখা বেণী দোলানো এক কিশোরী-- মনে পড়ে যাওয়া তার কিছু না-পাওয়ার গল্প, কিছু আঁসুর ইতিহাস। ওই যে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাওয়া পান্না-ঘাসের পথ, যে হারিয়ে গেছে শ্যাওলা-নরম পাইনের ছায়ায় ছায়ায়, তার ই কোন আড়ালে যেন সেই মেয়ে আজ ও খুঁজে চলে তার ছলকে পড়া কিছুটা মন, কয়েক টুকরো ভালোলাগা। যত কিছু হারিয়েছি বড়ো হয়ে ওঠার বাঁকে বাঁকে, সব মনে এসে ভিড় করে, নতুন করে ভাবায়, নতুন করে বর্ষার জলে ভরে ওঠে ক্ষত; নতুন ব্যাথায় নতুন অনুভবে নতুন রোমাঞ্চে জেগে উঠি, বেঁচে উঠি। বর্ষার নারকান্দা তার ভেজা শীত নিয়ে, তার পুরোনো কাঠের বাংলো নিয়ে, তার বহুযুগের ওপার হতে আসা মন-কেমনের  দুপুর নিয়ে কূলে কূলে উপচে ওঠে যেন।

নারকান্দার বিকেল-বিলাস কাছাকাছির দুটি দ্রষ্টব্য: হাটু পীক আর তান্নু জুব্বার লেক। চরাচর-ব্যাপী কুয়াশায় হাটু পীকের রাস্তা তার সরু পায়েচলা প্রস্থ আর তীক্ষ্ন বাঁক নিয়ে ভয়ের কাঁপন ধরিয়ে দিলো আমাদের শহুরে শিরায়-- আমাদের স্পিতি পথ-যাত্রার হলো শুভ-উদ্বোধন। 




বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

শীতের হরিয়ানা

শীতের নরম রোদে ধুয়ে যাওয়া বারান্দায় বসে আছি, "শহর থেকে আরো অনেক দূরে"র এই ইউনিভার্সিটি আবাসনে। আজকে আমার স্বঘোষিত ছুটি, আজকে আমার আরাম করে এক কাপ চা হাতে নিয়ে শার্লক হোমস পড়ার বেলা। আজকে আমার শীতের ওম পোহাতে পোহাতে অক্ষরের উল বোনার দিন।
এখানকার শীত ভারী অন্যরকম, কলকাতার উদযাপনের শীতের থেকে বা দিল্লির চমকদার শীতের থেকে অনেকটাই আলাদা। সকালে ইউনিভার্সিটি যাবার পথে দেখি রোদের আল্তো ছোঁয়াচে ভেসে যায় ভোরের ঘনিয়ে আসা তুন্দ। রাস্তার পাশে বিছিয়ে থাকে নানা রঙের খেত : নরম সবুজের ধান, চষা মাটির বাদামি , গাঢ় সবুজ কপিপাতার বাহার, আর সব ছাপিয়ে উজ্জ্বল হলুদ সর্ষের বিস্ময়। মটরপাতার সবুজের ফাঁকে বীজের সন্ধানে উৎসুক ময়ূরের নীল ঝুঁটি ঝলসে ওঠে। কালো-হলুদের টুকটুক ভিড় হয়ে যায় সকালের কাজে যাওয়া মানুষের গায়ের ওমে। মেয়েদের হাতের যত্নে সাজানো টিফিনবাক্স, মাথার ঘুঙঘট্ এড়ানো উদাস চোখের চাওয়া, ছেলেদের হাতের বাহারি রিংটোনের মোবাইল, সব মিলিয়ে প্রতি টুকটুকে দেখি এক এক কলি গল্প জমে উঠছে, বাইরের এই কোহরার ই মতো। ক্যাম্পাস জোড়া মরশুমি ফুলের সাজানো সৌন্দর্য ছাপিয়ে যায় রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা আধো-ঘুমের এইসব সকাল গুলো।


এখানকার শীত ভারী অন্যরকম। অন্য জায়গার মতো শীতের জামায় রঙের বাহার খেলে না এখানে। স্বভাব-রঙ্গীন হরিয়ানভী পোশাকে বরং লাগে রঙের দৈন্য; পুরোনো মোটা শাল আর সোয়েটার এর মালিন্যে হঠাৎ চোখে পড়ে যায় বৈষম্যের কুৎসিত মুখ। আর দিগন্ত-জোড়া মাঠের মালিকদের গায়ের দামি মোটা জ্যাকেট-এ দামের অংশটুকু বাদ দিলে কিছুই পড়ে থাকে না। অন্যরকম শীতের অন্যরকম এই মানুষ গুলোকে দেখতে দেখতে কখন যেন অনেকগুলো শোনা-সত্যি হঠাৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এই নরম শীতের সকালটার ই মতো।
সারাদিন থাকি অন্য দুনিয়ায়, ক্যাম্পাস এর নকল বিদেশে। সকালের আলোয় উপচে ওঠা আমার ভীষণ প্রিয় অফিস রুমে বসে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে দিব্যি কেটে যায় দিনটা। সবুজ মোলায়েম লন এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুবেশ ছটফটে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখতে দেখতে ভুলে যাওয়া যায় হাউসকিপিং মেয়েটির চোখের নিচের দগদগে হয়ে থাকা গার্হস্থ্য ক্ষত, ভুলে থাকা যায় ক্যাম্পাসের বাইরের এই হরিয়ানা ও আমার ই দেশ। শীতের সুখী বেলা এলোমেলো হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যায় সব গভীর ভাবনা, পড়ে থাকে শুধু অনেকগুলো সুখী চুমুকের শেষে কফিকাপের তলানি টুকু। ছোট ঘর, ছোট চিন্তা, ছোট পরিসরে কেটে যাওয়া আমাদের জীবনের ই মতো, ফুরিয়ে আসে ছোট শীতের বেলা।
অন্যরকম শীত ফিরে আসে সন্ধ্যেয় ফেরার পথে। বাঁকানো শিঙের রাজস্থানি গরুর পাল নিয়ে গোঠে-ফেরা রাখাল থামিয়ে দেয় ন্যাশনাল হাইওয়ে এক এর দিল্লিমুখী গাড়ির-স্রোত। টকটকে লাল ডুবন্ত সূর্য কে পাশে রেখে বাদামি ক্ষেতের ওপর আঁকা হয়ে যায় নীলগাই এর সান্ধ্য সিলুয়েট। কালো রাস্তার বুক চিরে তীব্র বেগে চলতে থাকা গাড়ির শব্দে নেমে আসে হঠাৎ বৈরাগ্য। আরো একটা তীব্র শীতল, বুক-কাঁপানো শীতের রাত নেমে আস্তে থাকে চরাচরে। সারারাত ট্রাকের আনাগোনায় মুখর, রাস্তার পাশে ধাবায় ক্ষণিক বিরতিতে আগুন পোহানোর রাত। অন্যরকম রাত। ভারী সুন্দর, ভারী অন্ধকার। ঠিক, এই অন্যরকম দেশের মতো। আমার দেশের মতো।

মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

তোমায় অনেকদিন হলো খুঁজছি, কোনো ঠিকানাই পাচ্ছিনা।কোথায় থাকো গো মেয়ে? কোন দেশে? সেখানে বুঝি বিকেলের এই পূবে হাওয়া পৌঁছয় না? সেখানে বুঝি ঘামে ভিজে যাওয়া শরীর জুড়িয়ে বড়ো বড়ো ফোঁটায়  নেমে আসে না হঠাৎ বৃষ্টি? আর সেই বৃষ্টিতে ছাতা নিয়েও কাকভেজা হয় না অন্যমন কোনো ইস্কুলফেরত মেয়ে? সেখানে বুঝি এপার ওপার বিছিয়ে থাকা ভরা বর্ষার গঙ্গা নেই, যার বুকে টিমটিমে আলো জ্বেলে সারারাত জেগে থাকে জেলে নৌকো রা? সেখানে বুঝি মেঘে মেঘে প্রতি ক্ষণে নতুন নতুন ছবি ফোটে না আকাশে? সেখানে বুঝি ভিজে সন্ধ্যের ঝালমুড়ি চা ফুচকা নেই? সেখানে বুঝি সারাদিনের একসুরে বৃষ্টি শুনতে শুনতে একটা গোটা উপন্যাস শেষ করার আলতো অলস মন খারাপ নেই? সেখানে বুঝি ইলিশ সর্ষে আর শেষপাতে রসগোল্লা নেই? সেখানে বুঝি অকারণ মনখারাপ হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানো বিকেল নেই, কথার স্রোতে ভেসে যাওয়া রাত নেই ? সেখানে বুঝি....

বাড়ি ফিরবে কবে, মেয়ে?

মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭

আজান এবং

আমাদের বাড়ি ছিল রাজাবাজারের বেশ কাছে, জ্ঞান হওয়া থেকেই আজানের ডাকে ঘুম ভাঙার অভ্যেস ছিল। এখনো বেশ মনে পড়ে সেই ভোরের হাওয়ায় ভেসে আসা ডাক, আর তারপরে হালকা হয়ে যাওয়া ঘুমে মা কে জড়িয়ে ধরে মা-মা গন্ধে ডুবে যেতে যেতে আবার ঘুমিয়ে পড়ার অদ্ভুত তৃপ্তি। বড়ো হয়ে স্কুল এ পড়ার সময় হলো রাত জাগার অভ্যেস। কাজে-অকাজে রাত কাবার করে ভোর পাঁচটায় শুতে যেতাম, আর ভোরাই হাওয়ায় ভেসে আসত আজানের সুর, একটু একটু করে আলো ফুটিয়ে দিত আকাশে, সেই আলোর ফুলকি-র কুঁকড়ো র মত-- আর রাতজাগা ক্লান্তিতে গা এলিয়ে দিতাম ঘণ্টাকয়ের ছোট্ট ঘুমে। আজান মানে ছিল কি এক অচেনা রেশ, আজান মানে ছিল পবিত্র ভোরের শুরু। দিনের অন্য সময়ের নামাজ তো যেমন-তেমন, ভোরের আজান যেন কি এক অপার্থিবের কথা বলত। 
আমি শব্দ-দূষণের পক্ষে নই, আমি মাইকে রবীন্দ্রসংগীতের পক্ষে নই, আমি বাবা তারকনাথের যাত্রার জলসত্রে মাইকে টুনির-মা-র পক্ষে নই, আমি অনর্থক হর্ন আর ভোটের আগে দিনভর জনসভার পক্ষে নই। কিন্তু আমি ভোরের আজানের, মাঝরাতের সন্ধিপুজোর, ক্রিস্টমাস ইভে ক্যারোল এর পক্ষে। কেননা আমার দেশ আমায় ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছে এই সব কিছুকে নিয়ে বাঁচতে, সম্মান করতে। অথবা, আমার কাছে এই ছোট ছোট সুবিধে-অসুবিধে, ভালোলাগা-না লাগা নিয়ে বাঁচার এই চালচিত্র টাই আমার দেশ। 

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...